দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো আমলে নেওয়া জরুরি
দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার আগে যে বিষয়গুলো আমলে নেওয়া জরুরি - বিশ্ব দুটো বিশ্বযুদ্ধ দেখেছে, আরও দুটো যুদ্ধ চলমান। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই মত দিয়েছেন, যেকোন মুহূর্তে লেগে যেতে পারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বিশ্বের তাপমাত্রা অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে উষ্ণ। বিশ্বব্যাপী বিবাহবিচ্ছেদের হার বেড়েছে। তরুণরা বিয়ের ওপর থেকেই আস্থা হারাচ্ছেন। আর এর ভেতরেই চলছে একাধিক সন্তান নেবার ‘ট্রেন্ড’।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাঁদের সবচেয়ে বেশি অনুসরণ করা হয়, তাঁদের ভেতর কিম কার্ডাশিয়ান, কাইলি জেনার, বিয়ন্সে, শাহরুখ খান বা বিরাট কোহলিরা একাধিক সন্তানের অভিভাবক হয়েছেন। তরুণ তারকাদের অনেকেই একাধিক সন্তানের বাবা–মা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। অনেকেই একাকীত্বে ভোগার অনিশ্চয়তা থেকে ‘বন্ধু’ বানাতেও সন্তান নেন। একা হাতে সন্তান বড় করাও ক্রমেই ‘স্বাভাবিক ঘটনা’ হয়ে উঠছে।
সে যা–ই হোক, এটা একান্ত মানুষের ব্যক্তিগত ইচ্ছা। তবে একটা সন্তানকে সুস্থভাবে বড় করে তোলার দায়িত্ব মূলত তাঁর মা–বাবার ওপরই পড়ে। সন্তানকে সুস্থভাবে বড় করার জন্য যা কিছু জরুরি, সেগুলো নিশ্চিত করতেই হবে। জেনে নেওয়া যাক, দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার আগে কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখবেন—
১. সময় নিন
মা হওয়া একটা জটিল প্রক্রিয়া। একবার মা হওয়ার পর শরীর বিশেষ করে জরায়ু, আলগা হয়ে যাওয়া পেটের পেশি ও লিগামেন্ট পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে অন্তত ২ বছর সময় নেয়। শরীরকে এই সময়টা আপনার দিতেই হবে। তারপর পরিকল্পনা করুন। এছাড়া মা হওয়ার সঙ্গে ঘুমের সময় কমে যাওয়ার একটা সরাসরি সম্পর্ক আছে। আগে স্বাভাবিক জীবনে ফিরুন। তারপর আস্তেধীরে সিদ্ধান্ত নিন।
২. অর্থনৈতিক অবস্থা
‘প্যারেন্টিং’ কোনো সহজ কথা নয়। আর যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার হয়ে যাওয়ায় ও সময়ের নানা বাস্তবতায় একটা সন্তানকে বড় করে তোলা এখন যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিন। একটা সন্তানের দুধ, প্যাম্পার্স, ডে কেয়ার, সাহায্যকারী, চিকিৎসা, স্কুল, পোশাক—খরচের খাতের কেবল শুরু আছে, শেষ নেই। তাই ভালোভাবে বুঝেশুনে আগান।
৩. দাম্পত্য সম্পর্ক
দাম্পত্য সম্পর্ক যদি তিক্ততায় ভরা থাকে, সেখানে দ্বিতীয় সন্তান তো দূরের কথা, প্রথম সন্তান নেবার সিদ্ধান্ত থেকেও বিরত থাকুন। সন্তান আপনাদের সময়, মনোযোগ, যত্ন, আদর–ভালোবাসা চায়। এটা পাওয়া তার পরম অধিকার। সেটা থেকে বঞ্চিত করা হবে ঘোরতর অন্যায়। তাই আগে নিজেরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরুন। তারপর তৃতীয়জনকে আমন্ত্রণ জানান। জেনে শুনে ‘একা হাতে’ সন্তান পালনের চ্যালেঞ্জের মুখে কেন পড়বেন?
৪. পেশাগত পরিকল্পনা
আপনার যদি জীবন নিয়ে বিশেষ কোন পরিকল্পনা থাকে যেমন উচ্চশিক্ষা বা পেশা পরিবর্তন অথবা পেশাগত জীবনে পদোন্নতি—সেক্ষেত্রে সন্তানকে আপনি কি তার প্রাপ্য সময়, যত্ন নিশ্চিত করতে পারবেন? বিষয়টি বিবেচনায় নিন। একটা স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে গিয়ে সন্তান নিন।
৫. বয়স, শারীরিক ও মানসিক অবস্থা, ওজন
দ্বিতীয়বার সন্তান নেবার আগে নিজের বয়স, অসুখ–বিসুখ, ফিটনেস পরীক্ষা করে নিন। ওজন ঠিক আছে কিনা জানুন। কম থাকলে বাড়ান। বেশি থাকলে কমান। প্রয়োজনে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। আর আপনি নিজেই যদি কোন কারণে বিষণ্নতায় ভোগেন, একটা সন্তান আপনাকে সারিয়ে তুলতে পারবে না। তাই আগে নিজে পুরোপুরি ফিট হোন।
৬. সন্তানের সুস্থতা, নিরাপত্তা
একটা শিশুর সবচেয়ে বড় প্রয়োজনগুলোর একটি হলো নিরাপত্তা। প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে কোন জটিলতা থাকলে সেটিও বিবেচনায় নিন। যেমন প্রথম সন্তানের বিশেষ কোন অসুখ থাকলে দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে সেরকম পরিস্থিতিতে পড়ার সম্ভাবনা কতটুকু, খেয়াল রাখুন।